Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তন ২০২৩
ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও সমাবর্তন বক্তা, বিশেষ অতিথি মাননীয় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকম-লী, প্রিয় গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ সাংবাদিকবৃন্দ ও সমবেত সুধীম-লী, আসসালামু আলাইকুম;
বক্তব্যের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সাথে বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে শহিদ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ সকল শাহাদাতবরণকারীদের।
আমাদের জাতীয় জীবনে ফেব্রুয়ারি মাস অশেষ গুরুত্ব বহন করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে প্রথম স্ফূরণ ঘটেছিল, তা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা ঘোষণা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের গণরায়কে উপেক্ষা করে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক জান্তার ষড়যন্ত্র ও বর্বরতা, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং সর্বোপরি একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পূর্ণতা লাভ করে। আর এই দীর্ঘ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের মহানায়ক ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মহান ভাষা আন্দোলনের এই মাসে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের ও ভাষাসৈনিকদের। যাঁরা পাকিস্তানের জন্মলগ্নেই পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন; বাঙালি জাতির মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে পাহাড়সম শক্তিশালী করেছিলেন।
আমি শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় চার নেতা, স্বাধীনতাযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মহান শহীদদের, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী দু’লাখ মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

সুধীম-লী
শীতের এই চমৎকার সকালে আয়োজিত সমাবর্তনের ভাবগম্ভীর ও আনন্দঘন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
দেশে উচ্চতর কৃষি শিক্ষার প্রধান বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সমাবর্তনে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সমাবর্তন একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান। সফল শিক্ষাজীবন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে নবীন গ্র্যাজুয়েটদের সামনে উন্মোচিত হয় বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশের দ্বার। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের এই অগ্রযাত্রায় জাতির শুভকামনা যুক্ত করার জন্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সদ্য সনদপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ     কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

প্রিয় সুধী
দিল্লীর মুঘল, ইংরেজ শাসন থেকে শুরু করে সর্বশেষ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আমলেও বাংলার কৃষক ছিল অন্তহীন শোষণ ও বঞ্চনার শিকার এবং নিপীড়িত ও অবহেলিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৈশোর-তরুণ বয়স থেকেই বাংলার কৃষকের দৈন্যদশা স্বচক্ষে দেখেছেন, যা তাঁর কোমল হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তাই আমরা দেখি, বঙ্গবন্ধুর সারা রাজনৈতিক জীবনজুড়ে কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন ও কল্যাণ ভাবনা নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমাদের সমাজে চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী, এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে”।
তাই আমরা দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই বাংলার চিরদুঃখী ও নির্যাতিত কৃষক চাষির উন্নয়নে বিরাট উদ্যোগ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই তিনি চাষিদের সমস্ত বকেয়া খাজনার সুদ মওকুফ করে দিলেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনাও মওকুফ করার ঘোষণা দিলেন। জমির মালিকানার সর্বোচ্চ সিলিং ১০০ বিঘা নির্ধারণ করেন। পাকিস্তানি শাসন আমলে রুজু করা ১০ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্তি দেন এবং তাদের সকল বকেয়া ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দেয়া হয়।
সুধীম-লী
ষাটের দশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ‘সবুজ বিপ্লব’ শুরু হলেও তার ছোঁয়া পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মাটিতে লাগতে দেয়নি। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার, সেচ, বীজসহ কৃষি উপকরণের প্রাপ্তি সহজতর করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি সারের ব্যবহার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। নগদ ভর্তুকি ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কৃষকের মাঝে সেচযন্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু সারা দুনিয়া থেকে খুঁজে খুঁজে কৃষকদেরকে সেচ যন্ত্র এনে দিয়েছিলেন। পূর্ব জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি পাম্প সংগ্রহ করেছিলেন।
তাছাড়া, কৃষি গবেষণায় ও কৃষি পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এসে কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে কৃষিবিদগণ লাভ করেন সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা। আজকে     কৃষির যে সাফল্য, তার পেছনে এই ঘোষণার বিরাট অবদান রয়েছে।
প্রিয় গ্র্যাজুয়েটগণ
জাতির পিতা কৃষি বিপ্লবের যে ধারা সূচনা করেছিলেন, সেই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রেখেছে। ১৯৭০-৭১ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য (চাল,গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে বিশ্বে পরপর চতুর্থবারের মতো তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে।
শুধু মোট উৎপাদন নয়, বাংলাদেশ খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে অনেক ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় উৎপাদনশীলতাকে ছাড়িয়ে গেছে ও শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয় জাপানের এক একর জমিতে তার তিন গুণ বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে ডবল ফসল করতে পারব না, দ্বিগুণ করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি, তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না’।
বঙ্গবন্ধুর সেই আকাক্সক্ষা আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পরপর দেশের বেশির ভাগ এলাকায় একটি বা দুটি ফসল হতো। এখন দেশে বছরে ২-৩টি ফসল হচ্ছে।    ১৯৭১-৭২ সালে হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন হতো গড়ে ১ টনের কিছু বেশি। ২০২১-২২ সালে হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন হয়েছে গড়ে সাড়ে চার টনেরও বেশি। হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৯.৭৫ টন, গম ৩ টন, আলু প্রায় ২১ টন।
কৃষি উন্নয়নের এই সাফল্য সারা পৃথিবীতে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। আমাদের জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মতৎপরতা এবং কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও কৃষক সমাজের নিবিড় কার্যক্রমের ফলেই এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
সুধীম-লী
চলমান কোভিড-১৯ এর কারণে বিগত প্রায় তিন বছর ধরে সারা বিশ্ব এক চরম ক্রান্তিকাল ও সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ, অবরোধ-পাল্টা অবরোধ। এসবের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’ বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু হতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে”- তার জন্য বার বার নির্দেশনা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে নানান দুর্যোগের মধ্যেও আমরা বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদনের ধারা শুধু অব্যাহত রাখা নয়, তা আরও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এর ফলে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় এবং বহুমুখী দুর্যোগের মধ্যেও বিশ্বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

প্রিয় কৃষিবিদগণ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কৃষিবিপ্লবের মাধ্যমে ‘সোনার বাংলা’ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এখন মানুষ পেট ভরে খেতে পায়। করোনাসহ শত দুর্যোগের মাঝেও কেউ না খেয়ে থাকে না। এটি মহান আনন্দের ও গৌরবের। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না, চাউল পাওয়া যায় না; যদি চাউল খেতে হয়, আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে’।
আজ আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও দূরদর্শিতায় বর্তমান সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধবনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে চালের জন্য আর দুনিয়াজুড়ে চেষ্টা করতে হয় না। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় চাল নিজেরাই এদেশে পয়দা করছি। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
২০০৮-০৯ সালে যেখানে মোট খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ কোটি ৭২ লক্ষ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। বিগত ১৪ বছরে চালের উৎপাদন ২৯%, গম ৩৭%, ভুট্টা ৬৭১%, আলু ১১০%, ডাল ৩২৮%, সবজি ৬৪৫%, পেঁয়াজ ৩৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির এই সাফল্য বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া এখন অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে।

সমবেত সুধী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে। পুষ্টিজাতীয় খাবার হলো দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ফলমূল ও শাকসবজি প্রভৃতি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু খাদ্য বলতে শুধু চাল-আটা নয়, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও শাকসবজির কথা বলেছিলেন এবং এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের বনজ সম্পদ, ফলের চাষ, গো-সম্পদ, হাঁস-মুরগির চাষ, সর্বোপরি মৎস্য চাষের ব্যবস্থা করতে হবে’।
সেই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গবাদি পশুপাখির টিকা উৎপাদন, চিকিৎসাসেবা প্রদান, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দুধ, ডিম, হাস-মুরগি ও গবাদি পশুর ফার্ম, মৎস্য চাষের খামার স্থাপনসহ নানা কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, দুধ, ডিম, মাছ, মাংসসহ অন্যান্য পুষ্টিজাতীয় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মৎস্য, ডিম, মাংস উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল মাত্র ২৭.০১ লক্ষ টন। বিগত ১৪ বছরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৭.৫৯ লক্ষ টনে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ইলিশ আহরণে প্রথম, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, চাষের মাছ উৎপাদনে ৩য় এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ স্থানে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন ছিল ২২.৮৬ লক্ষ টন, ১০.৮৪ লক্ষ টন, ৪৬৯.৬১ কোটি, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৩০.৭৪ লক্ষ টন, ৯২.৬৫ লক্ষ টন ও ২৩৩৫.৩৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে জনপ্রতি মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের প্রাপ্যতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমবেত সুধীবৃন্দ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এখন একটি উন্নত, লাভজনক, টেকসই ও জলবায়ুসহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই হবে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত হবে, কৃষকেরা উন্নত জীবন পাবেন। কিন্তু জমি হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তাকে টেকসই করতে হলে জলবায়ুসহনশীল ও উচ্চফলনশীল ফসলের জাত ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে, কৃষিতে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারনেট অব থিংস, ড্রোন প্রভৃতির ব্যবহার এবং প্রিসিসন ও ভার্টিকাল এগ্রিকালচারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গ্র্যাজুয়েটদেরকে এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেজন্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কারিকুলামকে উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। তাহলেই, আগামী দিনে স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গ্র্যাজুয়েটগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সমবেত সুধীম-লী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার প্রধান বিদ্যাপীঠ। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে টেকসই  কৃষি উন্নয়ন তথা গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর স্থাপনের লক্ষ্যে ছয় দশকেরও বেশি সময় পূর্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দীর্ঘ অভিযাত্রায় জাতির জ্ঞানভা-ার সমৃদ্ধ হয়েছে, যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমর্থ দক্ষ জনশক্তির সরবরাহ বেড়েছে এবং সর্বোপরি দেশের কৃষি প্রতিটি খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। কৃষি খাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দসহ দেশের অন্যান্য কৃষিবিদগণ, যারা গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারের কাজে নিজেদের সারাক্ষণ নিয়োজিত রেখেছেন। এভাবেই তাঁরা জাতির হৃদয়ে নিজেদের জন্য আপন স্থান তৈরি করে নিয়েছেন এবং উত্তরসূরীদের জন্য সামনে চলার পথ নির্দেশ করেছেন।

সুধীম-লী
বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছিলেন। বিশ্বের বুকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ নামক আমাদের এই প্রিয় রাষ্ট্র-স্বদেশটি তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
তেমনি স্বাধীনতার ৫০ (পঞ্চাশ) বছর পরে এসে আমরা দেখতে পাই- এই স্বাধীন দেশটির যতকিছু সাফল্য-অর্জন সবই এসেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সর্বক্ষেত্রে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাঁর সক্ষমতা দেখিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে মর্যাদা ও সম্মানে বিশ্বপরিম-লে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা গড়ে তুলবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও শান্তির ‘সোনার বাংলা’।

প্রিয় গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ
বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমাদের মতো দেশে-যাদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব সীমিত, সেখানে দক্ষ মানবসম্পদ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গুৎড়হ ঝ. ঝপযড়ষবং গবেষণার আলোকে বলেছেন, “ঞড় নবপড়সব ধ ঢ়ৎড়ংঢ়বৎড়ঁং পড়ঁহঃৎু, ড়হব ফড়বং হড়ঃ হববফ ঃড় যধাব ভবৎঃরষব ষধহফ ঃড় মৎড়ি পৎড়ঢ়ং ড়ৎ পড়ধষ ধহফ ফরধসড়হফ সরহব ড়ৎ ভড়ংংরষ ভঁবষ ৎবংবৎাব, ৎধঃযবৎ ঃবপযহরপধষষু ংশরষষবফ সধহঢ়ড়বিৎ ড়িঁষফ নব সধরহ ফবঃবৎসরহধহঃ; ধহফ ভৎড়স ঃযধঃ পড়ঁহঃ ঢ়ৎড়ংঢ়বপঃ রং ড়ঢ়বহ বহফবফ”. তোমাদের মতো তরুণেরাই আমাদের দেশের বিরাট শক্তি ও প্রকৃত সম্পদ। এই তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে বর্তমান সরকারও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায়, তোমাদের নিজেদেরকেও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
তোমাদের প্রত্যেককে আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজকের এই বর্ণাঢ্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তোমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপনের স্বীকৃত হিসেবে সনদপত্র লাভের মধ্য দিয়ে আজ তোমাদের জীবনে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। যে স্বপ্ন নিয়ে একদিন তোমরা প্রকৃতির শ্যামলিমায় ঘেরা এই অনন্য সুন্দর শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করেছিলে, দীর্ঘ ও কঠোর সাধনার মাধ্যমে স্বপ্নের সেই গন্তব্যের শেষ প্রান্তে আজ উপনীত হয়েছো। কৃতিত্ব ও সাফল্যের বিভায় দীপ্ত তোমাদের জীবনের এই অধ্যায়। তাই আজ শুধু স্বজন-পরিজন নয়, বরং সমগ্র জাতি তোমাদের নিয়ে গর্ববোধ করে। নিজেদের তোমরা জ্ঞানে দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছ। পেশাগত শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে শাণিত করার অনন্য সুযোগ পেয়েছো। এ সবই সম্ভবপর হয়েছে জনগণের করের অর্থে গঠিত সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দের কল্যাণে। দেশ ও জাতির কাছে এভাবে জমে উঠেছে অনেক ঋণ। এখন তোমাদের সেই ঋণ পরিশোধের পালা। গোটা দেশ আজ তোমাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘলালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রসেনানী হিসেবে আপন স্থান করে নেবে-এই আমাদের একান্ত কামনা ।

সুধীবৃন্দ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা প্রদান করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশের কৃষি ও কৃষিবিদগণকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আসুন, আমরা আবারো মিলিতভাবে অভিনন্দন জানাই সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী নবীন কৃষিবিদদের। আমাদের সম্মিলিত শুভাশীষ ধারায় স্পন্দিত হোক তাদের অভিযাত্রা, আমাদের শুভেচ্ছা হোক তাদের সামনে চলার প্রেরণা ও পাথেয়।
পরিশেষে, আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত অগ্রগতি ও সাফল্য কামনা করে এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।।

লেখক : মাননীয় মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ওয়েবসাইট :www.moa.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon